Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

হাসপাতাল স্বাস্থ্য কেন্দ্র

চিকিৎসাশিক্ষা
মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষা: কিছু প্রস্তাব
জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী | ১৭ সেপ্টেম্বর,
২০১৫
আগামী ১০ বছরে সুষ্ঠু গণতন্ত্র ও সুশাসনে       বাংলাদেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশে  উন্নীত হবে, তখন বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ২০০ মিলিয়ন (২০ কোটি) অতিক্রম করবে। তন্মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সী লোকসংখ্যা হবে তিন কোটির অধিক। সবার জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে কমপক্ষে এক লাখ জেনারেল প্র্যাকটিশনার এমবিবিএস ডাক্তার, বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতাল ও  স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনার   জন্য কমপক্ষে ২০ ধরনের ৮০ হাজার বিশেষজ্ঞ  চিকিৎসক এবং প্রশাসন, শিক্ষকতা, সামরিক  ও কারা হাসপাতালসমূহের জন্য আরও ৫০ হাজার চিকিৎসকের প্রয়োজন হবে। আরও প্রয়োজন হবে কমপক্ষে ৪০  জার করে গ্র্যাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট, ফার্মাসিস্ট ও ডেন্টাল সার্জন। তিন কোটি বৃদ্ধ মানুষের জন্য অতিরিক্ত ৬০ জার ডিপ্লোমা বাসার্টিফিকেটধারীফিজিওথেরাপিস্টেরও দরকার হবে।এত জনবল কীভাবে তৈরি বে?সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবলেছেন, মানবসম্পদ তৈরি হলেউন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে (দৈনিকবণিক বার্তা, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫)।এ ক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবক তৈরিরউদ্যোগ নিতে হবে এখনই।১. পর্যাপ্ত কিৎসক সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রাঅর্জনের জন্য এ বছর থেকে ৩৮টিসরকারি ডেন্টাল ও মেডিকেলকলেজে অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ আসনবাড়ানো দরকার। শিক্ষকসংখ্যাবাড়াতে না পারলেও ক্লাসরুমে কতকঅডিও জ্যুয়াল যন্ত্রপাতি স্বল্প খরচেযোগ করলে ভালোভাবে কাজচলবে। খরচ খুব বেশি নয়।সরকারি ও বেসরকারি প্রায় ১০০মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে।প্রতিটি মেডিকেলশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বছর থেকে ৫০ জনকরে ত্রকে ফিজিওথেরাপি ওফার্মেসি বিভাগে ভর্তি করাহোক। প্রথম শিক্ষাবর্ষে উভয়বিভাগের কিছু কোর্স যথা:অ্যানাটমি, ফিজিওলজি,ফার্মাকোলজি, বায়োকেমিস্ট্রিও কমিউনিটি হেলথ এমবিবিএসেরসমতুল্য। জিওথেরাপির ছাত্রদেরমাংসপেশি, স্নায়ু ও সন্ধি সম্পর্কেঅধিকতর জানতে হয়। তবে সুখের বিষয়যে দেশে অতিরিক্ত ফিজিকস ওকেমিস্ট্রি শিক্ষকের স্বল্পতা নেই।মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষারযোগ্যতা১. মাধ্যমিক ও চ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায়প্রাপ্ত গ্রেড গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটা মূলনিয়ামক নয়।২. জনদরদি ডাক্তার বেকারের মতোচিকিৎসাসেবক হওয়ার জন্য কেবলজিপিএ-৮/১০ যথেষ্ট নয়, নির্লোভসেবার মানসিকতা ও সহমর্মিতাথাকতে হবে। বেশি দরকার সাধারণমানুষের জন্য ভালোবাসা, দেশপ্রেমও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস।প্রয়োজনে গ্রাম, চর ও সারাবাংলাদেশকে নিজের শহর মনে করতেপারা এবং স্বাস্থ্য টিমের সব কর্মীরসঙ্গে মিলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানেরমানসিকতা।৩. ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন কেবলঅধূমপায়ী শিক্ষার্থীরা।৪. চিকিৎসাসেবার ডিগ্রির জন্যভর্তির প্রাথমিক যোগ্যতা নিরূপণেআধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশেরনিয়মাবলি বিবেচনায় নেওয়া যেতেপারে। ভারত, পাকিস্তানসহঅধিকাংশ দেশে উচ্চমাধ্যমিকে(এইচএসসি) দ্বিতীয় বিভাগ পেলেএকজন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশনিতে পারেন। ভারতের সবচেয়েনামকরা ডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঅল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেলসায়েন্সেসে (এআইআইএমএস) ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নিতে হলে দ্বিতীয়বিভাগ বা জিপিএ-৩ থাকলেই চলে।৫. উল্লেখ্য যে সব সরকারিবিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিন কঠিনবিজ্ঞান বিষয়ে, কৃষি ওভেটেরিনারি বিভাগে ভর্তিরপরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য জিপিএ-৬/৭থাকলেই চলে। ডিগ্রিতে জিপিএ-২.৫বা দ্বিতীয় বিভাগ থাকলে ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ারইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্টার্স ডিগ্রিপড়া যায়।বর্তমানে মেডিকেল ও ডেন্টালেভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ন্যূনতমজিপিএ-৮ এবং ফিজিওথেরাপিপড়ার জন্য জিপিএ-৭ থাকতে হয়। উভয়ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণেরজন্য এ কম প্রাথমিক যোগ্যতাঅযৌক্তিক। কেবল উচ্চমাধ্যমিকেরগ্রেড দ্বারা ভালো ডেন্টিস্ট ওফিজিওথেরাপিস্ট সৃষ্টি করা যায় না।৬. দেশের প্রয়োজনে এবং গ্রামেরছেলেমেয়েদের ভর্তি পরীক্ষায়অধিকতর হারে শগ্রহণের যোগসৃষ্টির নিমিত্তে আগের মতোএসএসসি ও এইচএসসি বিজ্ঞানে ন্যূনতমদ্বিতীয় বিভাগকে প্রাথমিকযোগ্যতা হিসেবে নির্ধারণ করাবাঞ্ছনীয়। এর নিচের শিক্ষার্থীদেরফিজিওথেরাপি, নার্সিং,ফার্মেসি ও অন্যান্য কিৎসাসেবা–সংক্রান্ত ডিগ্রি কোর্স পড়ারসুযোগ দিন।এ রকম সিদ্ধান্তে গ্রামের অতিরিক্ত ৩থেকে ৫ শতাংশ ছাত্র মেডিকেলেপড়ার সুযোগ পাবেন। বর্তমানে এইহার ১৫ শতাংশের কম।৭. পুনরায় ফিজিকস, মিস্ট্রি ওবায়োলজি পরীক্ষা নেওয়ারপ্রয়োজন নেই। চিকিৎসাসেবাঅধ্যয়নের জন্য নির্বাচিত হলে তাঁরানিজ প্রয়োজনে অধিকতর বিজ্ঞানশিক্ষা করবেন এমবিবিএস/বিডিএস/ফিজিওথেরাপি/ফার্মেসিঅধ্যয়নকালে এবং ন্টার্নশিপপিরিয়ডে।তাই ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবেছাত্রের মন-মানসিকতা যাচাইয়েরজন্য এবং দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধেরচেতনার বিষয়ে একটা স্বচ্ছ ধারণাপাওয়ার জন্য, যাতে ভবিষ্যতে এসবচিকিৎসাসেবক উপজেলা ও উনিয়নপর্যায়ে যাবেন কি না বোঝা যায়।মূল ভর্তি পরীক্ষা হবে সেবার মন-মানসিকতা নির্ধারণের নিমিত্তেএবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষতানিরূপণের জন্য। কারণ, বিজ্ঞানেরজগতে, বিশেষত চিকিৎসাশাস্ত্রেবিচরণের জন্য রেজি ভাষার জ্ঞানঅত্যাবশ্যক।ভর্তি পরীক্ষার নম্বরের বিন্যাসক) এসএসসি/এইচএসসিতে প্রাপ্তগ্রেডের জন্য ৫০ নম্বর। জিপিএ-৬ পেলে৩০ নম্বর, জিপিএ-৭ পেলে ৩৫ এবংজিপিএ-১০ পেলে ৫০ পাবেন।খ) রেজি ষার জ্ঞান পরীক্ষাহবে ৫০ নম্বরে। ইংরেজিতে চিঠিলেখা, ৫০০ শব্দের ছোট প্রবন্ধ লেখারজন্য ১৫ নম্বর, ইংরেজি থেকেবাংলায় অনুবাদ এবং বাংলা থেকেইংরেজিতে অনুবাদের জন্য ১৫ নম্বরকরে ৩০ নম্বর। ম্প্রতিক লেপ্রকাশিত বাংলাদেশির লেখাইংরেজি উপন্যাসের বিষয়বস্তু সম্পর্কেদুটি বাক্য রচনা ৫ নম্বর।গ) সেবা, দেশ পরিভ্রমণ ও মুক্তিযুদ্ধেরচেতনাবিষয়ক পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরে।১) ভাষা আন্দোলন, জনগণের বিভিন্নসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ–সম্পর্কিত প্রশ্নেরউত্তরের জন্য ৫০ নম্বর। কয়েকটি উদাহরণ:শেখ মুজিবুর রহমানকে কবে বঙ্গবন্ধুউপাধি দেওয়া হয়েছে?বাংলাদেশের স্বাধীনতার পতাকাপ্রথম কবে ওড়ানো হয়েছিল? কে থমউত্তোলন করেছিলেন? মাওলানাভাসানী কে ছিলেন? ১৯৭১ সালের ১৭এপ্রিলের ঘোষণার সারমর্ম,মুক্তিযুদ্ধকালে প্রবাসী সরকারেরমন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম? জাতীয়সংগীত কার লেখা? কে এটা স্থিরকরেছিলেন? ক্টর কমান্ডারদের নামইত্যাদি।২) বাংলাদেশের ভৌগোলিকপরিবেশ ও দেশবাসীর জীবন-জীবিকা–সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরেরজন্য ৩০ নম্বর।৩) মানসিক স্থিতি, সংস্কৃতি, সাঁতার,সাইকেল চালানোসহ অন্যখেলাধুলায় শগ্রহণ–সম্পর্কিতবিষয়ের জন্য ১৫ নম্বর।৪) সুন্দর হাতের লেখার জন্য ৫ নম্বর।সবার জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরতে হলে কমপক্ষে এক লাখ জেনারেলপ্র্যাকটিশনার এমবিবিএস ডাক্তার,বিভিন্ন পর্যায়ের সপাতাল ওস্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনার জন্য কমপক্ষে২০ ধরনের ৮০ হাজার বিশেষজ্ঞচিকিৎসক এবং প্রশাসন, শিক্ষকতা,সামরিক ও কারা হাসপাতালসমূহেরজন্য আরও ৫০ হাজার চিকিৎসকেরপ্রয়োজন হবেচিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়াবেবর্তমান মেডিকেল কারিকুলামেজনসাধারণের সঙ্গে, বিশেষত পল্লিরদরিদ্র মানুষের সঙ্গে ভবিষ্যতেরচিকিৎসকদের পরিচিতির পর্যাপ্তসুযোগ নেই। শিক্ষা কার্যক্রমেকমিউনিটি ডিসিনের জন্য বরাদ্দআছে দুই থেকে চার সপ্তাহ, যাকক্সবাজার ও কুয়াকাটার পিকনিকেব্যয়িত হয়।এমবিবিএস, বিডিএস ওফিজিওথেরাপির অনেক কোর্স প্রায়একই রকমের। তিন বিভাগের ছাত্রদেরকতক ক্লাস কত্রে নিলে নিজেদেরমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তেসহযোগিতা ও পারস্পরিকআলোচনার মনোভাব সৃষ্টি হবে।এতে রোগীরা অহেতুক হয়রানিথেকে মুক্তি পাবে এবং সুলভেচিকিৎসাসেবা পাবে।এ বছর ভর্তি পরীক্ষার ময়লিখিতভাবে প্রশ্নপত্রের ওপরে লিখেদেওয়া হোক, সব চিকিৎসাসেবাবিভাগের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী-নির্বিশেষে প্রতি শিক্ষাবছরে দুইথেকে চার সপ্তাহ ইউনিয়ন পর্যায়েনিজ খরচে অবস্থান করে দেশেরসাধারণ নুষের বন-জীবিকারসঙ্গে পরিচিত হতে হবে, গ্রামবাসীরস্বাস্থ্য সমস্যা ও রোগ-শোকের কথাশুনবেন, উপসর্গ ও লক্ষণ দেখে শিখবেন।গ্রামবাসীর কাছ থেকে আরও জানবেনমুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের কথা এবং সঙ্গেপাকিস্তানি নাদার বাহিনী ওরাজাকারদের অত্যাচারের কাহিনি।বিগত কয়েক বছর প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা মেডিকেলের ইন্টার্নশিপ একবছরের পরিবর্তে দুই বছর নির্ধারণ করারকথা বলে আসছেন। এটা অত্যন্তযৌক্তিক।বিএমডিসিকে নির্দেশ দিলে এ বছরথেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব।দুই বছর ইন্টার্নশিপের ১৮ মাস ব্যয়িতহবে নিজ নিজ মেডিকেল কলেজহাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে তিনমাস মেয়াদে যথা: ১) মেডিসিন ওকার্ডিওলজিতে, ২) সার্জারি ওঅর্থোপেডিকসে, ৩) গাইনিঅবসটিট্রিকসে, ৪) শিশু ও নবজাতকবিভাগে, ৫) চক্ষু, নাক-কান-গলা, চর্ম,মানসিক রোগ ও নেফ্রোলজিবিভাগে ও ৬) ডায়াগনস্টিকমেডিসিনে, অর্থাৎ থলজিপরীক্ষা, রক্ত পরিসঞ্চালন ও এক্স-রেআলট্রাসনোগ্রাফি বিভাগে।নবীন চিকিৎসকেরা বাকি ছয় মাসপ্রশিক্ষণ নেবেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ওপরিবারকল্যাণকেন্দ্রেসার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করে।প্রশিক্ষণার্থীদের ধিকতর সুবিধাদেওয়ার লক্ষ্যে অচিরেই প্রতিটিইউনিয়ন স্বাস্থ্য ওপরিবারকল্যাণকেন্দ্রে টয়লেট–সুবিধাসহ ২২ + ২৫ ফুট আয়তনের দুই রুম এবংশিক্ষকদের জন্য টয়লেট–সুবিধাসহ (১০ +´১৫ ফুট) ছোট দুটি রুম র্মাণ করলেঅপূর্ব বাসস্থানের সুবিধা হবে।প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সব আধুনিকসুবিধাসহ শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্যবাসস্থান তৈরিতে খরচ হবে ২০ লাখটাকার অনধিক। অর্থাৎ ২০০ কোটিটাকা বরাদ্দ দিয়ে এ বছরই ২০১৫-১৬) একহাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ওপরিবারকল্যাণকেন্দ্রে উন্নতমানেরবাসস্থান ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়েতোলা সম্ভব। এতে শিক্ষার মানবাড়বে এবং পল্লির জনসাধারণের জন্যমেডিকেল, ডেন্টাল ওফিজিওথেরাপি বার পরিধিব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। তদুপরিপ্রধানমন্ত্রী সারা পৃথিবীতে নন্দিতহবেন।উল্লেখ্য, সুষ্ঠু স্বাস্থ্যসেবার পরিধিবাড়ানোর নিমিত্তেকোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট অসকারঅরিয়েস নোবেল পুরস্কারপেয়েছিলেন—দুই গ গে।

জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী: ট্রাস্টি,গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র